বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) -এর বংশ পরিচয় - পর্ব ১
- বনী হাশিম
হাশিমের আসল নাম ছিল আমর । হাশিম উপাধি সে তখন লাভ করে যখন মক্কায় একবার দূর্ভিক্ষ হয়েছিল । সে সময় হাশিম শামদেশ হতে খাদ্য দ্রব্য এনে রুটি তৈরি করে এবং বহু উট জবেহ্ করে তার গোসত রান্না করে তার মধ্যে রুটি খন্ড বিখন্ড করে এক প্রকার মালিদা তৈরি করে লোকদেরকে খাওয়ায় ।
হাশিম শব্দের অর্থ ভাঙ্গা ও নিস্পেষিত করা । রুটি খন্ড - বিখন্ড করে উটের গোসত দিয়ে লোকদেরকে খাওয়ানোর জন্য তাকে হাশিম নামে আখ্যায়িত করে । রিফাদাহ ও সিকায়াহ এর দায়িত্ব হাশিমের উপর ন্যাস্ত হওয়ার পর তার নিয়ম ছিল যে , যখন হজ্বের সময় আসে তখন সে কুরাইশ লোকদেরকে একত্র করে বলে , এইসব আল্লাহর প্রতিবেশি এবং তাঁর ঘরের লোক এ সময় জিয়ারতের উদ্দেশ্যে তোমাদের কাছে আসে । এসব আল্লাহর মেহমান ।
আল্লাহর মেহমানগণই আপ্যায়ণের বেশি হকদার । আল্লাহ তোমাদিগকে এ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং তার বদৌলতেই তোমাদের মান সম্মান বেশি হয়েছে । তিনি তোমাদের এমনভাবে হেফাযত করেছেন যা কোন প্রতিবেশি তার প্রতিবেশির জন্যে করেনা । এজন্যে আল্লাহর মেহমানদের এবং যিয়ারতকারীদের সম্মান কর । তারা ধূলা ধূসরিত হয়ে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে এসেছে । এসেছে কংকালসার দূর্বল উটনীর পিঠে চড়ে । তাদের পোশাক ময়লা হয়েছে । তাদের পাথেয় শেষ হয়েছে । কাজেই তাদের আহার করাও পানি পান করাও ।
এ ব্যাপারে কুরাইশ পরিবারের সকল লোকদের পক্ষ থেকে চাঁদা আসতো । স্বয়ং হাশিম বিরাট অর্থ নিজের পক্ষ হতে ব্যয় করতো । মক্কার সকল কূপ হতে পানি এনে চামড়ার থলিগুলো ভর্তি করা হতো । কারণ জুরহুমীগণ যমযম কূপ ধ্বংস করে তা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল । রুটি গোসত একত্রে করে হাজীদেরকে খাওয়ানো হতো । ছাতু , খেজুরও খেতে দিত । হাজীদের মিনা হতে বিদায় হওয়া পর্যন্ত তাদের নানাভাবে আপ্যায়িত করা হতো । হাশিমের এ জনসেবা সকল গোত্রের প্রিয় পাত্র হওয়ার কারণ ছিল । তারা প্রতি বছর হজ্বের সময় তার উদারতাপূর্ণ জনসেবার দ্বারা উপকৃত হওয়ার সুযোগ লাভ করে ।
আবদুল মুত্তালিব বিন হাশিম
হাশিম তার ব্যবসায় সংক্রান্ত সফর উপলক্ষে শাম দেশে যাওয়ার পথে প্রায়ই মদীনায় অবস্থান করতেন । মদীনার খরজ গোত্রের এক মহিলাকে সে বিয়ে করেছিল এবং তার পক্ষ হতে হাইয়া নাম্নী এক কন্যা এবং সায়ফী নামক এক পুত্র জন্মগ্রহণ করে । আর এক সফরে সে খরজ গোত্রের বনী নাজ্জার পরিবারের সালমা বিনতে আমর বিন যায়েদ নাম্নী এক যুবতীকে দেখতে পেল । সে বাজারের মধ্যে একটি উঁচু জায়গায় বসে আদেশ করছে যে , তার জন্য কি খরিদ করা যায় এবং তার পক্ষ থেকে কি বিক্রি করা যায় । হাশিম তার রূপ , জাকজমক , সূক্ষ বিচার বুদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন । যুবতী তাকে শর্ত দিল যে সে তার নিজের পছন্দমত চলবে এবং ভালো না লাগলে ছেড়ে দিবে । হাশিম তার শর্ত মেনে নিল । মহিলাটি হাশিমের যোগ্যতা , বংশীয় মর্যদা দেখে বিবাহে রাজী হলো । মদীনাতেই তাদের বিবাহ সম্পন্ন হলো ।
এখানেই তার গর্ভ হতে ৪৯৫ খৃষ্টাব্দে আবদুল মুত্তালিব জন্মগ্রহণ করে । এ সফরেই হাশিম যখন গাজা এলাকায় পৌঁছে তখন রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে । এভাবে যৌবনে পদার্পন করার পূর্ব পর্যন্ত আবদুল মুত্তালিব মায়ের সাথে মদীনাতেই অবস্থান করেন । হাশিম মৃত্যুর সময় অসিয়ত করে যায় যে , তার মৃত্যুর পর তার ভাই মুত্তালিব তার স্থানে সিকায়াহ ও রিফাদার মুতাওয়াল্লী হবে এবং সেই তার পরিবার বর্গ ও বিষয় সম্পদের দেখাশুনা করবে ।
সে সময় থেকে বনী হাশিম ও বনী মুত্তালিব এক হয়ে যায় । এর বিপরীতে বনী আবদে শামস ( যার থেকে বনী উমাইয়া উৎপত্তি হয় ) এবং বনী নাওফাল একে অপরের মিত্র হয়ে পড়ে । হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর নবুয়্যতের সময় যখন কুরাইশের সকল গোত্র তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং শীবে আবি তালিবে তাকে অবরুদ্ধ রাখে , তখন বনী হাশিম এর সাথে বনী আল মুত্তালিবও এ অবরোধে নবী ( সাঃ ) এর সাথে ছিল । বনী নাওফাল ও বনী আবদে শামস বিরোধী দলে ছিল ।
আবদুল মুত্তালিবের আসল নাম ছিল শায়বা এবং তার দৈহিক সৌন্দর্যের জন্য তাকে শায়বাতুন হামদ বলা হত । সে মদিনায় প্রতিপালিত হচ্ছিল এমন সময় একদিন হাসসান বিন সাবিত ( রাঃ ) -এর পিতা সাবিত বিন মুনযের মক্কায় গিয়ে মুত্তালিবের সাথে দেখা করল । পূর্ব থেকেই তার সাথে সাবিতের মেলামেশা ছিল । তার সাথে আলাপ করার সময় সাবিত বললো তোমার ভাইপো শায়বা , একবার দেখনা তোমার মন আনন্দে ভরে যাবে । বড় সুন্দর জোয়ান ছেলে ।
এ কথা শুনে মুত্তালিব অধীর হয়ে পড়ে এবং মদীনায় গিয়ে ভাতিজাকে উটের পিঠে বসায়ে মক্কায় নিয়ে এল । কুরাইশের লোকেরা এ যুবক ছেলেটিকে সাথে আসতে দেখে বলতে লাগলো আবদুল মুত্তালিব ( অর্থাৎ মুত্তালিবের গোলাম ) । মুত্তালিব তাদেরকে ধমক দিয়ে বলে , এ আমার ভাই হাশিমের পুত্র শায়রা আমার গোলাম নয় ।
কিন্তু আবদুল মুত্তালিব নামটি এতো মশহুর হয়ে পড়লো যে , তার আসল নাম তলিয়ে গেল । কিছুকাল পরে মুত্তালিব এক বাণিজ্যিক সফরের উদ্দেশ্যে ইয়েমেন গিয়ে মৃত্যুবরণ করে । আবদুল মুত্তালিব তার স্থলাভিসিক্ত হল এবং সিজায়াহ ও রিফাদাহ এর পদমর্যাদা লাভ করে । ইবনে সাদ তার প্রশংসা করে বলেন , সে কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ছিল , সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান , সবচেয়ে ধীরস্থির ও সহনশীল , সবচেয়ে দাতা এবং ঐসব অনাচার থেকে সব সময় দূরে ছিল যা পুরুষদের অধঃপতন এনে দিত ।
ইবনে হিসাম আরও বলেন , সে তার কওমের সম্মান ও শ্রদ্ধার মর্যাদা লাভ করেছিল ১৮ তার পূর্বে আর কেউ লাভ করতে পারে নাই , তার কওম তাকে ভালবাসতো এবং লোকের মধ্যে সে মর্যাদার অধিকারী ছিল । ইবনে আমীর বলেন , আবদুল মুত্তালিবও রমজান মাসে হেরায় গিয়ে এবাদত করতো এবং রমজান মাসে গরিব মিছকিনদের সাহায্য করতো ।
আবদুল মুত্তালিবের চাচা নাওফাল হাশিমের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছিল । আবদুল মুত্তালিব প্রথমে কুরাইশদের প্রতিপত্তিশীল লোকদের কাছে অভিযোগ করে । তারা চাচা ভাতিজার কলহে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানায় ।
তারপর আবদুল মুত্তালিব তার নানার গোষ্ঠী অর্থাৎ মদিনার বনী আদি বিন তুজ্জার গোত্রের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে । তার পর মামা আবু সাঈদ বিন আদাস আশিজন লোকসহ মক্কায় পৌছে এবং বল পূর্বক নাওফালের কাছ থেকে ভাগিনার সম্পত্তি উদ্ধার করে দেয় । তারপর নাওফাল বনী হাশিমের বিরুদ্ধে বনী আব্দে শামসের সাথে মিলিত হয় এবং নবী করীম ( সাঃ ) রেসালাত এর পূর্ব পর্যন্ত বনী নাওফল তাদের দলভুক্ত থাকে ।
আবদুল মুত্তালিব যখন দেখলো বনী নাওফাল তার বিরোধী দলে মিলিত হয়েছে তখন সে খুযায়া সর্দারদের সাথে আলাপ - আলোচনা করে এবং তাদের সাথে ঐক্য ও পারস্পরিক সাহায্য চুক্তি করেন এবং খানায়ে কাবায় গিয়ে তারা রিতিমত চুক্তিনামা প্রনয়ণ করেন । তবে ইবনে সায়াদ বালাজুরীর বর্ণনায় কিছুটা গড়মিল আছে । তাহলো চুক্তিনামা লিখা হয় দারুন্নাদওয়াতে এবং খানায়ে কাবায় ঝুলানো হয় । সেই অনুসারে আবদুল মুত্তালিব তার সন্তানদের অসিয়ত করে যান তারা যেন বনী খুযায়ার সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখে ।
তারই প্রস্তাব মত হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত গুলোর মধ্যে একটি শর্ত ছিল , আরব গোত্রগুলোর মধ্যে যদি কেউ চায় তো উভয় পক্ষের যে কোন এক পক্ষের সাথে শরীক হতে পারে তখন খুযায়া গোত্র নবী করীম ( সাঃ ) এর সাথে শরীক হওয়ার কথা ঘোষণা করে।
আমাদের ওয়েব সাইটের বিষয়বস্তু অনুলিপি করা এবং এটি অন্য কোনও ওয়েবসাইটে পুনরায় প্রকাশ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সুতরাং সাবধান, আমাদের সাইটের লিখিত সামগ্রী কপি করবেন না।
যদি আপনার ডাউনলোড করতে সমস্যা হয় তবে দয়া করে মন্তব্য করুন বা ফেসবুক পেজে আমাদের সাথ যোগাযোগ করুন।
- ডিজাইনার: মামুনুল হক।
- সংস্থা: ইসলামিক পিএলপি ফাইল।
- ফাইল ফর্ম্যাট: জিপ সংরক্ষণাগার।
- ডিজাইনের ফর্ম্যাট: পিএলপি (পিক্সেলল্যাব প্রকল্প) [জেপিজি সংযুক্ত]।
- ডিজাইন সফটওয়্যার: পিক্সেলল্যাব।
- ডিজাইনের রেজুলেশন: আল্ট্রা এইচডি।
- ডিজাইনের রঙ: আরজিবি কালার।
- প্রিন্ট প্রস্তুত: হ্যাঁ।
- ডিজাইন সমর্থিত অ্যাপ্লিকেশন: পিক্সেলল্যাব ডার্ক।
- ডিজাইনের অবজেক্টের ধরণ: স্মার্ট অবজেক্ট।
- ডিজাইনের ধরণ: প্রিমিয়াম ডিজাইন।
- নকশা মূল্য: বিনামূল্যে।
- ডিজাইন কোড : I P F - 21
Tags:
লোগো ডিজাইন