জেনে নিন বান্দার উপর আল্লাহর হক এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কী? - Islamic Plp File

জেনে নিন বান্দার উপর আল্লাহর হক এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কী?

আল্লাহ তাআলার হক

মানুষের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো আল্লাহ তাআলার হক আদায় করা যিনি মানব জাতিকে নানান ধরণের নেয়ামত দান করেছেন এবং গোমরাহীর অন্ধকার থেকে বের করে হেদায়াতের আলো দান করেছেন । আবার হেদায়াতানুযায়ী আমলের প্রতিদানস্বরূপ বিভিন্ন প্রকারের নেয়ামতের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন । মানুষের দায়িত্বে আল্লাহ তাআলার হক চারটি—

( ১ ) কুরআন হাদীস অনুযায়ী আল্লাহ তাআলার সত্তা ও গুণাবলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ।

( ২ ) যেইসব আকীদা - বিশ্বাস , আমল - আখলাক , লেন - দেন , কাজ— কারবার আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় তা গ্রহণ করা ।

( ৩ ) আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি এবং ভালোবাসাকে সবকিছুর উপর প্রাধান্য দেওয়া ।

( ৪ ) মানুষের সাথে ভালোবাসা - শত্রুতা , দয়া - মায়া ইত্যাদি সব কিছুই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য হওয়া ।

নবী - রাসূলগণের হক

আল্লাহ তাআলার সত্তা ও গুণাবলী , আল্লাহ তাআলার পছন্দ - অপছন্দ ইত্যাদির পরিচয় আমরা যে নবী - রাসূলদের মাধ্যমে লাভ করেছি তাদের নিকট আল্লাহ তাআলা অহী প্রেরণ করেছেন । অনুরূপভাবে ইহকালীন অনেক ভালো - মন্দ ও উপকার - অপকারের কথা আমরা নবী - রসূলদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি । অসংখ্য ফেরেশতা আমাদের কল্যাণে নিয়োজিত । আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তারা আমাদের অনেক মঙ্গলজনক কাজ সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়ে থাকেন । এজন্য আম্বিয়া ( আঃ ) ও ফেরেশতাদের হক আল্লাহ তাআলার হকের অন্তর্ভুক্ত । নবীদের মধ্যে আমাদের প্রতি বিশেষতঃ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া ও এহছান সবচেয়ে বেশী । তাই তার হকও সবচেয়ে বেশী । সুতরাং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকটি হক নিম্নে উল্লেখ করা হলো । 

( ১ ) হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নবুওয়তের বিশ্বাস স্থাপন করা ।

(২)যে কোন ব্যাপারে তাঁর অনুসরণ করা ।

( ৩ ) তাঁর অসীম মর্যাদা ও গভীর ভালোবাসা মনে স্থান দেওয়া ।

( ৪ ) তাঁর উপর দরুদ পড়া ।

ফেরেশতাদের হক

ফেরেশতাদের হক নিম্নরূপ

( ১ ) ফেরেশতাদের অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস রাখা ।

( ২ ) তাদেরকে নিষ্পাপ বলে বিশ্বাস করা । তাদের নাম শুনে আলাইহিস সালাম ( তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক ) বলা। 

( ৪ ) দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু ( যেমন পিঁয়াজ , রসুন , মুলা , বিড়ি - সিগারেট ও তামাক ইত্যাদি ) খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করলে কিংবা মসজিদে বায়ু ছাড়লে ফেরেশতাদের কষ্ট হয় বিধায় এসব ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং অন্য যেসব কাজে ফেরেশতাদের কষ্ট হয় তা হতে বেঁচে থাকা । যেমন ছবি রাখা , শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত কারণ ছাড়া কুকুর পালন করা , মিথ্যা কথা বলা কিংবা অলসতা শতঃ ফরয গোসল না করা অথবা শরয়ী কিংবা স্বাভাবিক প্রয়োজন ব্যতিরেকে উলঙ্গ হওয়া ।

সাহাবা ও নবী পরিবারের হক

সাহাবায়ে কেরাম ( রাঃ ) ও নবী পরিবারের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক উভয় ধরনের সম্পর্ক রয়েছে । তাই এদের হক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হকেরই অন্তর্ভুক্ত । সাহাবা ও নবী পরিবারের হকের মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ

( ১ ) তাদের আনুগত্য করা ।

(২) তাদেরকে ভালবাসা ।

( ৩ ) তাদের ন্যায়পরায়ণ , বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য হওয়ার বিশ্বাস রাখা

( ৪ ) যারা তাদেরকে ভালবাসে তাদেরকে ভালবাসা এবং যারা তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে তাদের সাথে শত্রুতা রাখা ।

উলামা - মাশায়েখদের হক

আলেম সমাজ যেহেতু যাহেরী বাতেনী সর্বদিক দিয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরাধিকারী ও স্থলাভিষিক্ত , তাই তাদের হকসমূহও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হকেরই অন্তর্ভুক্ত ।

উলামা মাশায়েখের হক হলো—

( ১ ) ইসলামী আইনের বিশেষজ্ঞ , হাদীস বিশারদ , মাসায়েলে তরীকত , সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও ধর্মীয় পুস্তক রচয়িতাদের মঙ্গলের জন্য সর্বদা দোআ করতে থাকা । 

( ২ ) শরীয়ত অনুমোদিত কাজে তাদের আনুগত্য করা ।

( ৩ ) তাদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে সম্মান ও ভালবাসা এবং তাদের সাথে শত্রুতা ও বিরোধিতা না করা ।

( ৪ ) নিজের সামর্থ্য ও প্রয়োজনানুযায়ী তাদের আর্থিক সাহায্য করতে থাকা ।

মাতা - পিতার হক

এতক্ষণ যাদের হকের কথা বলা হলো তারা ছিলেন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমাদের দ্বীনী নেয়ামত লাভের মাধ্যম । সেজন্য তাদের হক আদায় করা অপরিহার্য্য আবার কারো কারো মাধ্যমে আমরা দুনিয়াবী নেয়ামতও লাভ করেছি । শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের হক আদায় করাও জরুরী । যেমন — মাতা - পিতা । আমাদের জন্ম ও লালন - পালনের ব্যাপারে তাদের ভূমিকা অপরিসীম । তাদের হক হলো—

( ১ ) মাতা - পিতাকে কোনপ্রকার কষ্ট না দেওয়া যদিও তাদের পক্ষ থেকে কোন বাড়াবাড়ি হয়ে যায় ।

( ২ ) আমাদের আচার - আচরণ কথা - বার্তায় তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ।

( ৩ ) শরীয়ত সমর্থিত সকল কাজে তাদের কথা মেনে চলা ।

( ৪ ) যদি প্রয়োজন হয় তবে তাদের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করা ( যদিও তারা কাফের হয় ) ।

মৃত্যুর পর মাতা - পিতার হক

( ১ ) মৃত্যুর পর তাদের জন্য গোনাহ মাফ ও রহমতের দোআ করতে থাকা এবং নফল ইবাদত সদকা খয়রাত ও অন্যান্য ইবাদত করে ইহার সওয়াব তাদের জন্য বখশিয়া দেওয়া ।

( ২ ) জীবদ্দশায় তারা যাদের সাথে উঠাবসা করতেন তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করা । প্রয়োজনে তাদেরকে আর্থিক সাহায্য করা ।

(৩) তাদের কোন ঋণ থাকলে তা আদায় করে দেওয়া।

( ৪ ) কখনও কখনও তাদের কবর যেয়ারত করা ।

মাতাপিতার হক সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস [ অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত ] 

সন্তানের উপর পিতা - মাতার হক্কসমূহ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা - মাতার উপর সন্তানদের হক্কসমূহ যেভাবে বর্ণনা করেছেন এভাবেই সন্তানদের উপর মাতা - পিতার হক্কসমূহ ও অন্যান্য দায়িত্বও বর্ণনা করেছেন । বরং তিনি উহাকে ঈমানের অংশ বিশেষ সাব্যস্ত করেছেন । কুরআন মজিদ যা আল্লাহতায়ালার নিকট থেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরে অবতীর্ণ হয়েছে উহাতে পিতা - মাতার সেবা এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ , আল্লাহর একত্ববাদ এবং ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গেই এমনভাবে দেওয়া হয়েছে , যা দ্বারা বুঝা যায় যে মানবজাতির কর্মসমূহে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের পরেই পিতা - মাতার সেবা এবং তাদিগকে সুখ - শান্তির দিবার স্থান ।

সূরায়ে বনি ইসরাঈলে এরশাদ হয়েছেঃ “ তোমার প্রভুর কঠোর আদেশ এই যে , শুধু তারই ইবাদত কর এবং পিতা - মাতার সঙ্গে ভাল ব্যবহার এবং তাদের সেবাযত্ন কর । ” 

সুরায়ে লুকমানে পিতা - মাতার হক্ক বর্ণনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ইহাও বর্ণনা করেছেন যে , যদি কারও পিতা - মাতা মুশরিক হয় এবং সন্তানকেও শিরক ও কুফর করার জন্য বাধ্য করে তখন সন্তানদের কর্তব্য হবে তাদের কথায় কুফর এবং শিরক না করে । তবে দুনিয়াতে তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার এবং তাদের খেদমত করতে থাকবে ।

নিম্নে বর্ণিত হাদীসসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা - মাতার হক্কসমূহ এবং তাদের সম্পর্কীয় সন্তানদের কর্তব্য সম্বন্ধে যা কিছু এরশাদ করেছেন উহা প্রকৃতপক্ষে কুরআন মজীদের আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা বা তাফসীর ।

মাতা - পিতার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি সন্তানদের জান্নাত এবং জাহান্নাম

* হযরত আবু উমামা ( রাযিঃ ) থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন যে , জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল ! সন্তানদের উপর পিতা - মাতার হক্ব কতটুকু ? তিনি উত্তরে বললেন , পিতা - মাতা তোমাদের বেহেশত এবং দোযখ ।

অর্থাৎ যদি তুমি পিতা - মাতার অনুগত হও এবং তাদের খেদমত কর ; এতে তাঁরা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তবে তুমি জান্নাত পাবে । পক্ষান্তরে , তুমি যদি তাদেরকে কষ্ট দাও এবং তাঁরা অসন্তুষ্ট হন তাহলে তোমার ঠিকানা দোযখে হবে ।

আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতা - মাতার সন্তুষ্টির সঙ্গে জড়িত

* হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে , সূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন ,

“ আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত । ”

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আপন প্রভু ও মনিবের সন্তুষ্টি কামনা করে তার কর্তব্য আপন পিতাকে সন্তুষ্ট রাখা । আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পিতার সন্তুষ্টি শর্ত এবং পিতার অসন্তুষ্টির অবশ্যম্ভাবী ফল আল্লাহর অসন্তুষ্টি । সুতরাং , যে ব্যক্তি পিতাকে অসন্তুষ্ট করবে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে বঞ্চিত থাকবে ।

উক্ত হাদীসে ‘ ওয়ালেদ ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যা আরবী ভাষায় শুধু ‘ পিতার ’ অর্থ প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার হয় । এ হিসাবে উক্ত হাদীসে মাতার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নাই । কিন্তু অন্যান্য হাদীসসমূহে মাতার মর্যাদা পিতা হইতেও উচ্চে বলে বর্ণনা করা হয়েছে । এজন্য মাতার সন্তুষ্টি এবং অসন্তুষ্টিরও ঐ গুরুত্বই হবে এবং উহার ঐ মর্যাদাই হবে যা এই হাদীসে পিতার সন্তুষ্টি এবং অসন্তুষ্টি সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে ।

মাতার হক্ক পিতার হক্ক থেকে অধিক

* হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন , জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল , হে আল্লাহর রাসূল ! আমার নিকট থেকে সেবা এবং সদ্ব্যবহার পাওয়ার কার দাবী অধিক ? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তোমার মা , আমি আবার বলছি তোমার মা , আমি আবার বলছি তোমার মা , ইহার পরে তোমার পিতার হক্ক , ইহার পর তোমার নিকটবর্তী আত্মীয় , ইহার পর যে তোমার নিকটবর্তী আত্মীয় । —বুখারী ও মুসলিম

বৃদ্ধ পিতা - মাতার সেবায় অবহেলাকারী দুর্ভাগা

* হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন , সে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হোক । জিজ্ঞাসা করা হলো ইয়া রাসুলুল্লাহ সে কে ? তিনি বললেন , দুর্ভাগা ঐ ব্যক্তি যে পিতা - মাতা উভয়কে বা তাদের মধ্যে একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়ে সেবা করে জান্নাত অর্জন করতে পারে নাই । —মুসলিম

ফায়েদাঃ হযরত আবু উমামার হাদীস যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে । যার মধ্যে বলা হয়েছে যে , মাতা - পিতা তোমার জান্নাত এবং তোমার দোযখ । ( অর্থাৎ মাতা - পিতার খেদমত এবং সুখ - শান্তি দেওয়া জান্নাত অর্জনের একটি উপায় এবং উহার বিপরীত তাদের অবাধ্য হওয়া এবং দুঃখ ও কষ্ট দেওয়া মানুষকে দোযখী বানায় । ইহা আরো স্পষ্ট যে পিতা - মাতা যখন বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে তখন খেদমতের ও শান্তির দিকে অত্যন্ত মুখাপেক্ষী হয় । ঐ সময়ে তাদের খেদমত আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য আমল এবং জান্নাতে পৌঁছবার সোজা সিঁড়ি । আল্লাহতায়ালা যেই বান্দাকে এ সুযোগ করেছেন এবং সে পিতা - মাতা উভয়কে বা একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পায় এবং তাদের খেদমত করে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছতে পারে নাই নিঃসন্দেহে সে দুর্ভাগা । তাদের সম্পর্কেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন — সেই ব্যক্তি অপমানিত , লাঞ্ছিত হোক ।

কোন্ কোন্ অবস্থায় পিতা - মাতার খেদমত করা হিজরত এবং জিহাদ থেকেও অগ্রগণ্য

* হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন একদা জনৈক ব্যক্তি হুযুরের নিকট এসে আরয করল , ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি জিহাদে যেতে চাই । তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তোমার পিতা - মাতা আছে ? সে উত্তরে বলল , জ্বি আছে । তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইলেন তাদের খেদমত সুখ সুবিধা দিবার জন্য চেষ্টা কর । ( ইহাই তোমার জন্য জিহাদ । ) — আবু দাউদ 

ফায়েদাঃ হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কথা বুঝতে পেরেছিলেন বা সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে সন্দেহ হয়েছিল যে তার পিতা - মাতা তার খেদমতের মুখাপেক্ষী এবং সে তার পিতা - মাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদের জন্য এসেছে । এজন্য তিনি তাকে বাড়ীতে পিতা - মাতার খেদমত করার জন্য আদেশ দিলেন কেননা এই অবস্থায় মাতা - পিতার খেদমত অগ্রগণ্য ।

উল্লেখিত হাদীসের মর্ম এই নয় যে , যাদের মাতা - পিতা আছে তারা জিহাদের জন্য যেন ঘর থেকে বের না হয় । শুধু ঐ সকল ব্যক্তি জিহাদে যাবে যাদের পিতা - মাতা নাই । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে যে সকল ছাহাবা যুদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই পিতা - মাতা জীবিত ছিলেন ।

* “ হযরত আবু সায়ীদ খুদরী ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন যে জনৈক ব্যক্তি ইয়ামান থেকে হিজরত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পৌঁছল । তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন ইয়ামানে তোমার কে আছে ? সে বলল , আমার পিতা - মাতা আছে । তিনি পুনঃ জিজ্ঞাসা করলেন , তারা কি তোমাকে অনুমতি দিয়াছে ? সে বলল অনুমতি দেয় নাই । তিনি পিতা - মাতার নিকট ফিরে যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং জিহাদে বা দ্বীনের কাজে আত্মনিয়োগের জন্য অনুমতি চাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন । যদি তারা তোমাকে অনুমতি দান করে তখন এসে জিহাদে শরীক হয়ে যাও । যদি অনুমতি না দেয় তবে তাদের খেদমত কর এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে থাক । — আবু দাউদ , আহমদ

ফায়েদাঃ হিজরতকারী এবং জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে চিন্তাধারা এবং আদর্শ ছিল উহার আলোতে এই প্রকার সকল হাদীস সম্বন্ধে এ কথাই বলা যায় যে , উহার সম্বন্ধ ঐ ক্ষেত্রে যখন পিতা - মাতা খেদমতের মুখাপেক্ষী হয় এবং অন্য কেউ তাদের সেবার জন্য না থাকে এজন্য তারাও অনুমতি না দেয় । এ ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তাদের খেদমত হিজরত ও জিহাদ থেকে অগ্রগণ্য হবে ।

মায়ের পায়ের নীচে বেহেশত

* হযরত মুয়াবীয়া ইবনে জাহেমা থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন যে , জাহেমা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন , ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি এবং এ সম্বন্ধে আপনার সঙ্গে পরামর্শ করতে এসেছি । তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমার কি মা আছে ? জাহেমা বললেন হাঁ , আমার মা আছে । তিনি বললেন , তার সঙ্গে থাক , তার খেদমত কর , তার পায়ের নীচে তোমার বেহেশত । – আহমদ ও নাসায়ী

মাতার সেবা বড় বড় গুনাহ মাফের উছিলা

* হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন , জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে হাজির হয়ে জিজ্ঞাসা করল , ইয়া রসুলুল্লাহ ! আমি অত্যন্ত বড় একটি গোনাহ করেছি , আমার তাওবা কবুল হবে ? আমি ক্ষমা পেতে পারি কি ? তিনি জিজ্ঞাসা করলেন , তোমার মা জীবিত আছেন ? সে ব্যক্তি উত্তর দিল আমার মা জীবিত নাই । হুযুর জিজ্ঞাসা করলেন , তোমার খালা জীবিত আছেন ? ঐ ব্যক্তি উত্তর দিল , হাঁ , খালা জীবিত আছেন । তিনি তখন বললেন , তার খেদমত কর এবং তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর । ( আল্লাহ তায়ালা সেই বরকতে তোমার তাওবা কবুল করে ক্ষমা করে দিতে পারেন । —তিরমিযী

ফায়েদাঃ তাওবা কি ? অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর নিকটে কৃত গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া , যেন আল্লাহর গযব এবং শাস্তি থেকে বাঁচতে পারে , গুনাহের কারণে যেই শাস্তির উপযুক্ত হয়েছে । তাওবা কবুল হওয়ার অর্থ এই যে , আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তার প্রতি রাযি হয়ে যান । সকল নেক আমলেরই এই বৈশিষ্ট্য যে , গুনাহসমূহের মন্দ প্রভাবকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দয়া টেনে নিয়ে আসে । কিন্তু কোন কোন নেক আমলে এ ব্যাপারে অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে । উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় পিতা - মাতার খেদমত তদ্রূপ খালা , নানীর খেদমতও ঐসকল আমলের অন্তর্ভুক্ত যার বরকতে আল্লাহ তায়ালা বড় বড় গুনাহগারদের তাওবা কবুল করে ফেলেন এবং তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান ।

মাতা - পিতার মৃত্যুর পর তাদের বিশেষ হক্কসমূহ

পিতা - মাতার হক্কসমুহ সন্তানের উপর হইতে জীবনের সঙ্গে শেষ হয়ে যায় না বরং তাঁদের মৃত্যুর পর তাদের কিছু অন্যান্য দাবীসমূহ সন্তানদের উপর আপতিত হয় যা আদায় করতে থাকা সৌভাগ্যশালী সন্তানদের কর্তব্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত পাওয়ার পন্থাস্বরূপ ।

* আবু উছাইদ সায়ীদী থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন , একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত ছিলাম । বনি সালমার এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমার পিতা - মাতার আমার উপরে এমন কোন হক্ক আছে যা তাঁদের মৃত্যুর পর আমার আদায় করতে হবে ? তিনি এরশাদ করলেন , হাঁ , তাঁদের মঙ্গলের জন্য দোয়া করতে থাকা , তাঁদের জন্য ক্ষমা এবং মাফের প্রার্থনা করা , কারো সঙ্গে তাঁদের অঙ্গীকার বা চুক্তি থাকলে তা পূরণ করা , তাঁর মাধ্যমে যে আত্মীয় - স্বজন আছে তাদের প্রতি খেয়াল রাখা এবং তাদের হক্ব আদায় করা এবং তার বন্ধু বান্ধবের সম্মান করা । “ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন , যদি কেউ নিজের পিতাকে কবরের মধ্যে আরাম দিতে চায় এবং তাঁর খেদমত করতে চায় তাহলে পিতার মৃত্যুর পর পিতার ভাইদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে । —ইবনে হাব্বান

* হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান যে , পিতার খেদমত এবং তাঁর সাথে সদ্ব্যবহারের উত্তম খেদমত হলো এই যে , তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখা এবং পিতার মুহাব্বতের হক্ব আদায় করা । —মুসলিম

ফায়েদাঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরের উক্ত দুইটি হাদীসে পিতার ভাইদের এবং বন্ধুদের আলোচনা করা হয়েছে । এ কথাটুকু পূর্বেই জানা গেছে যে , মাতার হক্ক পিতা হইতে অধিক । ইহা ব্যতীত আবু উছাইদ ( রাঃ ) এর বর্ণনায় পিতা - মাতার আত্মীয়দের সঙ্গে সদ্ব্যবহার এবং তাদের দোস্ত আহবাবদেরকে সম্মান করা।

পিতা - মাতার মৃত্যুর পর সন্তানদের কর্তব্য ।

* হযরত আনাছ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত — তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন , এমনও হতে পারে কোন ব্যক্তির পিতামাতা উভয়ই বা তাদের কোন একজন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তাদের সন্তান তাদের জীবদ্দশায় অবাধ্য ছিল এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করা থেকে বঞ্চিত ছিল । কিন্তু এ সন্তান তাদের ইন্তেকালের পরে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট মঙ্গল ও দয়া এবং ক্ষমা ও বখশিশের জন্য দোয়া করতে থাকে । ( এভাবে সে নিজের ত্রুটির ক্ষতিপূরণ করতে চায় । ) আল্লাহতায়ালা বাধ্যগত বলে সাব্যস্ত করেন । ( সে পিতা - মাতার অবাধ্যতার শাস্তি থেকে বেঁচে যায় ) – বায়হাকী অবাধ্য সত্ত 

ফায়েদাঃ যেভাবে পিতা - মাতার জীবদ্দশায় তাদের বাধ্য হওয়া , খেদমত করা এবং সদ্ব্যবহার করা উচ্চস্তরের নেক কাজ যা বড় বড় গুনাহকে শেষ করে দেয় সেভাবে তাঁদের মৃত্যুর পর একনিষ্ঠতা সঙ্গে তাঁদের জন্য ক্ষমার ও রহমতের দোয়া এমন আমল যা একদিকে পিতা - মাতার জন্য কবরের মধ্যে আরাম ও শান্তির কারণ হয় অন্যদিকে সন্তানের ঐ ত্রুটির ক্ষতিপূরণ হয়ে যায় যা পিতা - মাতার বাধ্যতা এবং খেদমতের মধ্যে হয়েছিল । সে নিজেও আল্লাহর রহমত ও দয়া পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যায় । কুরআন শরীফে সন্তানগণকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন আল্লাহর নিকটে পিতা - মাতার জন্য রহমত ও ক্ষমা চাইতে থাকে ।

 ❝আল্লাহুমা রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী ছগীরা❞ 

আল্লাহ তায়ালার নিকট আরয কর হে প্রভু ! আমার পিতা - মাতার উপর দয়া কর যেভাবে তারা আমাকে ছোটবেলায় ( দয়ার সঙ্গে ) লালন পালন করেছিল ।

পিতা - মাতার সেবা এবং বাধ্য হওয়ার পার্থিব উপকারিতা

পিতা - মাতার সেবা এবং বাধ্য থাকার প্রকৃত প্রতিদান জান্নাত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি যেমন ঐ হাদীসসমূহের দ্বারা বুঝা গেছে যা ‘ মাতা - পিতার হক্ক ’ শিরোনামে উল্লেখ করা গেছে । কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন যে , পিতা - মাতার খেদমতকারী এবং হুকুমপালনকারী সন্তানগণকে আল্লাহতায়ালা বিশেষ বরকত এ দুনিয়ার মধ্যেও দিয়ে থাকেন ।

* হযরত জাবির ( রাঃ ) হইতে বর্ণিত — তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান— “ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা পিতা - মাতার খেদমত , বাধ্যতা এবং সদ্ব্যবহারের কারণে সন্তানের আয়ু বৃদ্ধি করেন । ” —ইবনে মাজা

ফায়েদাঃ এই প্রকারের হাদীসসমূহ তাকদীরের মাসআলার সঙ্গে কোন সংঘর্ষ বা বৈপরিত্ব নাই । কেননা আল্লাহ তায়ালার প্রথম থেকেই এ কথা জানা ছিল যে , ব্যক্তি পিতা - মাতার বাধ্য ও খেদমত করবে , এ হিসাবে তার আয়ু অতিরিক্ত নির্ধারিত করা হয়েছে যা পিতা - মাতার খেদমত এবং বাধ্য না থাকার বেলায় দেওয়া হতো । এভাবে ঐসকল হাদীসকেও বুঝা উচিত যার মধ্যে কোন ভাল কাজের কারণে রিযিকে বরকত ও প্রশস্ততার সুসংবাদ দান করা হয়েছে অথচ রিযিকের প্রশস্ততা ও অপ্রশস্ততাও পূর্ব নির্ধারিত। 

 * হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ( রাঃ ) হইতে বর্ণিত — তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান , “ আপন পিতা - মাতার খেদমত কর এবং বাধ্য থাক তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের খেদমত করবে এবং হুকুম মান্য করবে । তোমরা আপন চরিত্রকে পাক - পবিত্র রাখ তোমাদের স্ত্রীগণ পাক - পবিত্র থাকবে । —তবরানী

অর্থাৎ যে সন্তান পিতা - মাতার বাধ্য থাকবে এবং খেদমত করবে আল্লাহ তায়ালা তার সন্তানকে তার বাধ্য এবং খেদমতকারী বানিয়ে দিবেন । এমনিভাবে যারা পাক - পবিত্র জীবন যাপন করবে আল্লাহ তায়ালা তাদের বিবিগণকে পাক - পবিত্র জীবন যাপন করার সুযোগ করে দিবেন ।

পিতা - মাতার অবাধ্যতা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পিতা - মাতার বাধ্য থাকাকে এবং তাদেরকে আরাম পৌঁছানকে জান্নাত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ এবং উচ্চস্তরের সৎ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন তেমনিভাবে তাদের অবাধ্য হওয়া এবং কষ্ট দেওয়াকে কবীরা গুনাহসমূহের অন্যতম অর্থাৎ সর্বনিকৃষ্ট গুনাহসমূহের মধ্যে একটি বলে বর্ণনা করেছেন ।

* হযরত আনাছ ( রাঃ ) হইতে বর্ণিত — তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বড় বড় গুনাহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলো । ( যে বড় গুনাহ কি কি ? ) তিনি উত্তরে ফরমাইলেন , “ ( ১ ) খোদার সঙ্গে শরীক করা ( ২ ) পিতা - মাতার অবাধ্য হওয়া এবং কষ্ট দেওয়া ( ৩ ) কোন ব্যক্তিকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা ( ৪ ) এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া । ”

ফায়েদাঃ বুখারীর অন্য এক রেওয়ায়াতেও এই সকল গুনাহকে সর্ববৃহৎ গুনাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন । যেই ক্রমানুসারে তিনি এগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন ইহা দ্বারা বুঝা যায় শিরকের পরেই পিতা - মাতার অবাধ্য হওয়ার স্থান এমন কি হত্যা করার স্থানও ইহার পরে ।

* হযরত ইবনে আমর হইতে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন , “ নিজের পিতা মাতাকে গালি দেওয়া কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে একটি । সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন , হে আল্লাহর রাসূল ! কোন ব্যক্তি কি নিজের পিতা - মাতাকে গালি দিতে পারে ? তিনি বললেন , হ্যাঁ , এভাবে গালি দিতে পারে , যেমন কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির মাতা - পিতাকে গালি দিল তখন এই ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির পিতা - মাতাকে গালি দিল । ( সে যেন নিজের পিতা - মাতাকে গালি দেওয়াইল । ) —বুখারী ও মুসলিম

ফায়েদাঃ এই হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে , কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তিকে গালি দেওয়া বা কোন মন্দ কথা বলা যার ফলে দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির মা - বাপকে গালি দিতে লাগল । ইহা এত মন্দ কাজ যেমন নিজের পিতা - মাতাকে গালি দেওয়া মন্দ কাজ । ইহা কবীরা গুনার অন্তর্ভুক্ত । ইহা দ্বারা অনুমান করা যায় যে হুযুরের শিক্ষার মধ্যে পিতা - মাতার মর্যাদার স্থান অতি উচ্চে এবং এ ব্যাপারে মানুষের কতটুকু সতর্ক থাকা চাই ।

Post a Comment

Previous Post Next Post