চীনে কিভাবে ইসলামের আগমন ঘটেছিল ? - ইসলামিক পিএলপি ফাইল


তাং সাম্রাজ্য ক্ষমতাসীন থাকার সময় চীনের সাথে মুসলিম অঞ্চল গুলির যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল 960 সালে সং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলে তা আরও প্রসারিত হয় । চীনে মুসলিম বসতি আগেই শুরু হয়েছিল তা এই সময় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে । বিশেষ করে পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে বৈদেশিক বাণিজ্যও মুসলিমরা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন । নৈতিক কারণেও চীনের সম্রাট বহুজাতিক জনগোষ্ঠীকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে আসেন । পরবর্তী শতাব্দি গুলোতে মুসলিম বণিকরা ব্যবসা এর উদ্দেশ্যে চীনে আসতে থাকে ।

চীনে কিভাবে ইসলামের আগমন ঘটেছিল ? - ইসলামিক পিএলপি ফাইল


চীনের বড় বড় শহরে বিশেষ করে গুয়াংজু , কুয়াংজু হাংজুর মত বড় বড় উপকূলীয় বাণিজ্যিক নগর গুলিতে মুসলিম বণিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ পর্যায়ে এ অঞ্চলগুলিতে তারা মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। চীনের গুয়াংজু তে অবস্থিত হুয়াইশেং মসজিদ টির বয়স প্রায় 13  শত বছর । যদিও এ পর্যন্ত মসজিদটি পুনরায় কয়েক বার সংস্কার করা হয়েছে । বলা হয়ে থাকে এটিই চীনের সবথেকে পুরনো মসজিদ । তখনকার দিনে ইসলাম মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া থেকে আগত মুসলিমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । তখন পর্যন্ত চীনের স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েনি । 

12 71 সাল থেকে 1368 এই সময়ে ইউ ওয়াং রাজবংশের শাসন আমলে চীনের মুসলিমরা কিছুকাল সামাজিক প্রতিপত্তি লাভ করে । কেননা প্রভাব বিস্তারের দিক থেকে এ শাসনামলে মঙ্গোলীয় শাসকগোষ্ঠীর পড়ে ছিল আরব পারস্য ও তুরস্ক থেকে আগত মুসলিমদের অবস্থান । আর উপজাতীয় বর্ণপ্রথার কারণে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হারছিয়াং তখনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি । পরবর্তীতে চীনের শাসন ভার চলে যায় স্থানীয় মিং রাজবংশের কাছে । তারা 1368 থেকে 1644 সাল পর্যন্ত চীন শাসন করে । এসময় মঙ্গল জনগোষ্ঠির সাথে বেশ কিছু মুসলিম জনগোষ্ঠীও চীনে এসে বসবাস শুরু করেন । তবে তখন সমুদ্রের তীরবর্তী  বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলিতে মুসলিমদের প্রভাব কমে আসছিল । 

এর কারণ ছিল বিশাল চীন সাম্রাজ্য বাইরের পৃথিবী থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে নিচ্ছিল । তবে চিনা মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ সময় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছিল । তারা স্থানীয় সংস্কৃতি গভীর ভাবে গ্রহণ করতে থাকে । তারা চীনা নাম আত্মপরিচয় হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে । তবে এসময় মজার ঘটনা হচ্ছে বহুল পরিচিত মুসলিম নাম চীনারী দিতে নতুন রূপ লাভ করেছিল । নামের মধ্যে হাদুনী দ্বারা হাসান , হুদুনী দ্বারা হুসাইন ও সাহাদুনী দ্বারা সাইদ নাম, এসমস্ত নাম মুসলিমদের ভিতরে দেখা যেতে থাকে ।

 

সময়ের সাথে সাথে মিং রাজবংশের মুসলিম উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছিল ।  এবং কি সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীতেও প্রশিক্ষক ও পদস্থ ব্যক্তিত্ব হিসেবেও মুসলিম চরিত্র দেখা গেল । লানিও ছিলেন এমন একজন মুসলিম দক্ষ সেনাবাহিনী , তিনি মিং সাম্রাজ্য জু ওয়াং জাং এর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন । মিং সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মানিত তিনজন সেনা প্রধানের মধ্যে তাকেও একজন হিসেবে গণ্য করা হয় । যুগ যুগ ধরে ইসলামের বাণী প্রচার হয়েছে বিশ্বজুড়ে, আল্লাহর নির্দেশনা মেনে নবী-রাসূলের ধর্ম প্রচার মানুষকে একত্রিত করেছে  শান্তির পতাকা তলে। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় একথা মেনে নিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন অগণিত মানুষ। একটা সময় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র চীনে নানান ধরনের প্রচারণা ছিল। সেখানেও শান্তির বার্তা নিয়ে পৌঁছায় ইসলাম।

 

তবে চিনে ইসলাম আগমনের সঠিক সময়  নিয়ে  দুইটি মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ৬২০ খ্রিস্টাব্দে চীনে ইসলাম ধর্ম প্রবেশ করে। আবার অনেকে বলছেন নবীজি (সাঃ) এর মৃত্যুর ২৯ বছর পর ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা) কূটনৈতিক মিশনের মধ্য দিয়ে চীনে ইসলামের আগমন ঘটে। এক্ষেত্রে কেউ আবার বলেন ৬৫১ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর দ্বারা দূত দের নেতা হয়ে  সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস তৃতীয় বারের মতো চেনে গমন করে। তারা আবিসিনিয়া থেকে জাহাজে রওয়ানা হয়ে চট্টগ্রাম, কামরুক,মনিপুর,রুট ধরে চীনে পৌছান তাং সম্রাট গাওজান তাদেরকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান এবং ক্যান্টনে স্মারক মসজিদ নির্মাণ করতে আদেশ করেন। এটি ছিল চীনের সর্বপ্রথম মসজিদ। যা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি হয়। হুই কিংবদন্তি সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস ছিলেন প্রথম সারির একজন সাহাবী ও নবীজির আত্মীয়। হুই কিংবদন্তি অনুসারে চীনে ৬১৬ বা ৬১৭ সালে সাহাবীদের চীনে ভ্রমণের মাধ্যমে ইসলামের সূচনা ঘটে।

 

যদিও ধর্মনিরপেক্ষ কোন ইতিহাসে চিনে সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রাঃ এর আগমন সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই, তবুও ঐতিহাসিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, সপ্তম শতাব্দীর যেকোনো সময় মধ্যপ্রাচ্য ও চীনের ব্যবসায়িক সম্পর্কের সূত্র ধরে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে।  তাং সাম্রাজ্য ক্ষমতাসীন থাকার সময় চীনের সাথে মুসলিম অঞ্চল গুলির যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল 960 সালে সং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলে তা আরও প্রসারিত হয় । চীনে মুসলিম বসতি আগেই শুরু হয়েছিল তা এই সময় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে । বিশেষ করে পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে বৈদেশিক বাণিজ্যও মুসলিমরা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন । নৈতিক কারণেও চীনের সম্রাট বহুজাতিক জনগোষ্ঠীকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে আসেন । পরবর্তী শতাব্দি গুলোতে মুসলিম বণিকরা ব্যবসা এর উদ্দেশ্যে চীনে আসতে থাকে ।

 

চীনের বড় বড় শহরে বিশেষ করে গুয়াংজু , কুয়াংজু হাংজুর মত বড় বড় উপকূলীয় বাণিজ্যিক নগর গুলিতে মুসলিম বণিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ পর্যায়ে এ অঞ্চলগুলিতে তারা মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। চীনের গুয়াংজু তে অবস্থিত হুয়াইশেং মসজিদ টির বয়স প্রায় 13 শত বছর । যদিও এ পর্যন্ত মসজিদটি পুনরায় কয়েক বার সংস্কার করা হয়েছে । বলা হয়ে থাকে এটিই চীনের সবথেকে পুরনো মসজিদ । তখনকার দিনে ইসলাম মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া থেকে আগত মুসলিমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । তখন পর্যন্ত চীনের স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েনি । 

 

12 71 সাল থেকে 1368 এই সময়ে ইউ ওয়াং রাজবংশের শাসন আমলে চীনের মুসলিমরা কিছুকাল সামাজিক প্রতিপত্তি লাভ করে । কেননা প্রভাব বিস্তারের দিক থেকে এ শাসনামলে মঙ্গোলীয় শাসকগোষ্ঠীর পড়ে ছিল আরব পারস্য ও তুরস্ক থেকে আগত মুসলিমদের অবস্থান । আর উপজাতীয় বর্ণপ্রথার কারণে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হারছিয়াং তখনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি । পরবর্তীতে চীনের শাসন ভার চলে যায় স্থানীয় মিং রাজবংশের কাছে । তারা 1368 থেকে 1644 সাল পর্যন্ত চীন শাসন করে । এসময় মঙ্গল জনগোষ্ঠির সাথে বেশ কিছু মুসলিম জনগোষ্ঠীও চীনে এসে বসবাস শুরু করেন । তবে তখন সমুদ্রের তীরবর্তী  বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলিতে মুসলিমদের প্রভাব কমে আসছিল । 

 

এর কারণ ছিল বিশাল চীন সাম্রাজ্য বাইরের পৃথিবী থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে নিচ্ছিল । তবে চিনা মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ সময় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছিল । তারা স্থানীয় সংস্কৃতি গভীর ভাবে গ্রহণ করতে থাকে । তারা চীনা নাম আত্মপরিচয় হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে । তবে এসময় মজার ঘটনা হচ্ছে বহুল পরিচিত মুসলিম নাম চীনারী দিতে নতুন রূপ লাভ করেছিল । নামের মধ্যে হাদুনী দ্বারা হাসান , হুদুনী দ্বারা হুসাইন ও সাহাদুনী দ্বারা সাইদ নাম, এসমস্ত নাম মুসলিমদের ভিতরে দেখা যেতে থাকে ।

 

সময়ের সাথে সাথে মিং রাজবংশের মুসলিম উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছিল । এবং কি সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীতেও প্রশিক্ষক ও পদস্থ ব্যক্তিত্ব হিসেবেও মুসলিম চরিত্র দেখা গেল । লানিও ছিলেন এমন একজন মুসলিম দক্ষ সেনাবাহিনী , তিনি মিং সাম্রাজ্য জু ওয়াং জাং এর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন । মিং সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মানিত তিনজন সেনা প্রধানের মধ্যে তাকেও একজন হিসেবে গণ্য করা হয় ।  সাম্রাজ্যের বহু সামরিক বিজয়ের সাথে তার নাম জড়িত , তার সাথে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উত্তর এশিয়ায় চেঙ্গিস খানের পরিবার চালিত মঙ্গল শক্তির বিরুদ্ধে অভিযান । 1 লাখ 50 হাজার সেনা সৈন্যবাহিনী নিয়ে তিনি অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । বিশাল সৈন্যদলের জন্য খাদ্য ও রসাদের সংকট নিয়ে তিনি যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন । শুধু তাই নয় শত্রুপক্ষে প্রায় 80 হাজার পরাজিত যোদ্ধাকে তিনি করেছিলেন, যার মধ্যে রাজপরিবারের সদস্যরাও ছিল । এই যুদ্ধের ফলে মঙ্গোলরা আগের থেকে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল ।

 

মিং সাম্রাজ্যের একজন মুসলিম সেনা দক্ষ ছিলেন মুইং । ধারণা করা হয় তিনি হুই গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন । তার নামের মুইং অংশটি মুহাম্মদ নাম থেকে আগত বলে ধারণা করা হয়। মেনশন রাজ্যের প্রতি বিশ্বস্ততার পুরস্কার স্বরূপ উনান প্রদেশের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল । চীনের মিং রাজত্বকালের সম্ভবত সবচেয়ে প্রসিদ্ধ সেনা দক্ষ ছিলেন হুদা হাই । ঐতিহাসিকরা তাকে ইরান থেকে আগত মুসলিম হিসেবে মনে করে থাকেন । বর্তমানে আনহুই প্রদেশের তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন । উত্তর এশিয়ায় মিং রাজবংশের আক্রমণের সময় চীনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । নদীর তীরবর্তী হাইকিং রাজবংশের আক্রমণের সময় তিনি চীনের সেনাবাহিনীতে যোগদেন । প্রতিপক্ষ মিয়াও রাজবংশের অনেক সেনাপতিকে তিনি বন্দি করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।

 

ইয়াংবর্তী নদীর তীরবর্তী অঞ্চল জিয়াংমান এলাকার শাসনাধীনে ন্যস্ত করা হয়েছিল ।  সাংজুর মত হুদা হাই সামরিক কৌশল ও যুদ্ধনীতির বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন । আনহুই প্রদেশ থেকেই মিংসু প্রদেশে আর একজন সেনা দক্ষ নাম করেছিলেন ,তিনি ছিলেন চাংউ চাং ,মিং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় তিনিও অন্যতম অবদান রেখেছেন ।

Post a Comment

Previous Post Next Post