নামাযে মাকরূহ্ এবং নিষিদ্ধ কাজ - ইসলামিক পিএলপি ফাইল

১। মাসআলাঃ যাহা করিলে গোনাহ্ হয় এবং নামাযের ছওয়াব কম হয় কিন্তু নামায নষ্ট হয় না , এরূপ কাজকে মকরূহ্ বলে । - রদ্দুল মোতার

২। মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে শরীর , কাপড় কিংবা অলংকারাদি নাড়াচাড়া করা ( দাড়িতে অনর্থক হাত বুলান বা ধুলা - বালি ঝাড়া ) কংকর সরান মকরূহ । অবশ্য যদি সজ্দার জায়গায় কোন কংকর ( বা কাঁটা ) থাকে যাহার কারণে সজ্দা করা যায় না , তবে একবার কি দুইবার হাত দিয়া তাহা সরাইয়া দেওয়া জায়েয আছে ।

নামাযে মাকরূহ্ এবং নিষিদ্ধ কাজ - ইসলামিক পিএলপি ফাইল


৩। মাসয়ালাঃ নামাযের মধ্যে আঙ্গুল মটকান , কোমরের উপর হাত রাখিয়া দাঁড়ান , ডানে বামে এদিক - ওদিক মুখ ফিরাইয়া দেখা মকরূহ্ । অবশ্য ঘাড় বা মুখ না ফিরাইয়া শুধু চোখের কোণ দিয়া ইমামের বা কাতারের উঠা - বসা দেখিয়া লওয়া দুরুস্ত আছে । কিন্তু নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত এরূপ করাও অনুচিত । – বেদায়া

৪। মাসআলা : নামাযের মধ্যে চারজানু হইয়া ( আসন গাড়িয়া ) বসা , কুকুরের মত বসা , হাঁটু খাড়া করিয়া চুতড় ও হাত মাটিতে রাখিয়া বসা , মেয়েদের উভয় পা খাড়া রাখিয়া বসা ( এবং পুরুষদের সজদার মধ্যে উভয় হাত বা পা বিছাইয়া রাখা ) মকরূহ্ । অবশ্য রোগ ব্যাধির কারণে যেভাবে বসার হুকুম আছে , যদি সেইভাবে বসিতে না পারে , তবে যেভাবে পারে সেভাবেই বসিবে , ঐ সময় কোন প্রকার মকরূহ্ হইবে না --বেদায়া , তানবীর

৫। মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে হাত উঠাইয়া ইশারা করিয়া কাহারও সালামের জওয়াব দেওয়া মকরূহ্ । মুখে সালামের জওয়াব দিলে নামায টুটিয়া যাইবে ।

৬। মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে ধুলা - বালির ভয়ে কাপড় গুটান বা সামলান মকরূহ্ ।

৭। মাসআলাঃ যে স্থানে এরূপ আশঙ্কা হয় যে , হয়ত কেহ নামাযের মধ্যে হাসাইয়া দিবে , বা মন এদিক - ওদিক চলিয়া যাইবে , বা লোকের কথা - বার্তায় নামাযে ভুল হইয়া যাইবে , সেরূপ স্থানে নামায পড়া মকরূহ্ । - রদ্দুল মোহতার

৮। মাসআলাঃ কেহ কথাবার্তা বলিতেছে বা কোন কাজ করিতেছে , তাহার পিঠের দিকে মুখ করিয়া নামায পড়া মকরূহ্ নহে , কিন্তু আশেপাশে অন্য জায়গা থাকিলে এরূপ স্থানে নামায শুরু করা উচিত নহে । কারণ হয়ত তাহার উঠিয়া যাওয়ার প্রয়োজন হইতে পারে এবং নামাযের কারণে যাইতে না পারায় বিরক্তি বা কষ্ট অনুভব করিতে পারে বা তাহার কোন ক্ষতি হইয়া যাইতে পারে বা হয়ত সে জোরে কথাবার্তা শুরু করিয়া দিতে পারে এবং সে কারণে নামাযে ভুল হইতে পারে । কাহারও মুখের দিকে মুখ করিয়া নামায পড়া মকরূহ । – আলমগীরী

৯। মাসআলাঃ সামনে কোরআন শরীফ , ( বাতি , লণ্ঠন ) বা তলওয়ার লটকান থাকিলে তাহাতে নামায পড়া মকরূহ হয় না ( অন্ধকার ঘরে নামায পড়া মকরূহ্ নহে । )

১০। মাসআলাঃ তছবীরদার ( ছবিওয়ালা ) জায়নামায রাখা মকরূহ্ এবং ঘরে তছবীর বা ফটো রাখা কঠিন গোনাহ্ ( অবশ্য যদি কোনখানে পাক বিছানায় ছবি থাকে এবং তাহার উপর নামায পড়ে , তবে নামায হইয়া যাইবে , কিন্তু ছবির উপর সজদা করিবে না , ( পা রাখিবে । ) ছবির উপর সজদা করিলে নামায মকরূহ হইবে ।

১১। মাসআলা : নামাযীর সামনে বা উপরে অর্থাৎ ছাদ বা বারেন্দায় বা ডানে কি বামে যদি ছবি থাকে , তবে নামায মকরূহ হইবে । ( পিছনের দিকে ছবি থাকিলেও মকরূহ্ হইবে । কিন্তু কম দরজার মকরূহ ) । পায়ের নীচে ছবি থাকিলে মকরূহ হইবে না । ছবি যদি এত ছোট হয় যে , দাঁড়াইলে দেখা যায় না , কিংবা ছবি পূর্ণাঙ্গ নহে বরং মাথা কাটা এবং অস্পষ্ট তবে উহাতে কোন দোষ নাই । উহা যেদিকেই থাকুক নামায মকরূহ্ হইবে না । শরহে তাবীর

১২। মাসআলাঃ প্রাণীর ছবিওয়ালা কাপড় পরিয়া নামায পড়া মকরূহ । – শরহে তাবীর

১৩। মাসআলা : বৃক্ষ - লতা , দালান কোঠা ইত্যাদি অচেতন পদার্থের ছবি হইলে মকরূহ নহে । — তানবীর

১৪। মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে আয়াত , সুরা বা তসবীহ্ আঙ্গুলে গণনা করা মকরূহ্ । যদি হিসাব শুধু আঙ্গুল টিপিয়া ঠিক রাখে , তবে মকরূহ হইবে না — তান্বীর

১৫। মাসআলাঃ প্রথম রাকা'আত অপেক্ষা দ্বিতীয় রাকা'আত ( তিন আয়াত বা ততোধিক পরিমাণ ) লম্বা করা মকরূহ । — তাবীর

১৬। মাসআলাঃ কোন নামাযের কোন সূরা এমনভাবে নির্দিষ্ট করিয়া লওয়া যে , কখনও সেই সূরা ছাড়া অন্য সূরা পড়িবে না , ইহা মকরূহ্ । — তানবীর

১৭। মাসআলা : কাঁধের উপর রুমাল ( বা অন্য কোন কাপড় ) ঝুলাইয়া রাখিয়া নামায পড়া মকরূহ । – হেদায়া , তানবীর 

১৮। মাসআলাঃ ( ভাল লোকের সমাজে যাইতে লজ্জা বোধ হয় এমন ) অত্যন্ত খারাপ ও ময়লা কাপড় পড়িয়া নামায পড়া মকরূহ্ । অবশ্য যদি অন্য কাপড় না থাকে , তবে মকরূহ্ হইবে না । ( কনুইর উপর আস্তিন গুটাইয়া নামায পড়া মকরূহ্ । ) —তাম্বীর

১৯। মাসআলাঃ টাকা , পয়সা , সিকি , দুয়ানি ইত্যাদি বা অন্য কোন জিনিস মুখের মধ্যে চাপিয়া রাখিয়া নামায পড়া মকরূহ্ । যদি এমন কোন জিনিস হয় যাহাতে কোরআন পড়া যায় না , তবে নামায়ই হইবে না — তান্বীর

২০। মাসআলা : পেশাব পায়খানা ( বা বায়ু ) চাপিয়া রাখিয়া নামায পড়া মকরূহ্ । —রদ্দুল মোহতার

২১। মাসআলাঃ বেশী ক্ষুধার সময় খানা তৈয়ার থাকিলে খানা খাইয়া তারপর নামায পড়িবে , নতুবা ( খাইবার চিন্তায় ) নামায মকরূহ্ হইয়া যাইবে । অবশ্য যদি নামাযের ওয়াক্ত চলিয়া যাইবার মত হয় বা জমা'আত ছুটিয়া যাইবার ভয় হয় , তবে নামায আগে পড়িয়া লইবে । —শরহে তাবীর

২২। মাসআলা : চক্ষু বন্ধ করিয়া নামায পড়া ভাল নহে । কিন্তু যদি চক্ষু বন্ধ করিয়া লইলে দিল ঠিক হয় , তবে চক্ষু বন্ধ করিয়া পড়ায় কোন দোষ নাই । — তানবীর


২৩। মাসআলাঃ ( নামাযের মধ্যে মুখ খুলিয়া হাই ছাড়া মকরূহ্ । ) বিনা যরূরতে থুথু ফেলা বা নাক ঝাড়া মকরূহ্ । যদি ঠেকা পড়ে , তবে থুথু বা সিকনি কাপড়ের কোণে লইয়া মুছিয়া ফেলিবে , নামায টুটিবে না । কিন্তু ডান দিকে যা কেব্‌লার দিকে জায়গা থাকিলেও সে দিকে থুথু ফেলিবে না বাম দিকে থুথু ফেলিয়া দিবে ।


২৪। মাসআলা : নামাযের মধ্যে ( মশা পিঁপড়া , উঁকুন বা ) ছারপোকায় কামড়াইলে উহাদিগকে মারা ভাল নয় , আস্তে হাত দিয়া তাড়াইয়া দিবে এবং না কামড়াইলে হাত দিয়া তাড়ানও মকরূহ্ । ( এইসব মারিয়া মসজিদে ফেলা মকরূহ্ । যদি কষ্ট দেয় , তবে মারিয়া বাহিরে ফেলিয়া দিবে । )


২৫। মাসআলাঃ ফরয নামাযে বিনা যরূরতে দেওয়াল , খুঁটি বা অন্য কোন জিনিসের উপর ভর দিয়া দাঁড়ান মকরূহ্ । —মুনিয়া


২৬। মাসআলাঃ ( কোন কোন লোক এত তাড়াতাড়ি নামায পড়ে যে , ) সূরা খতম হইবার দুই এক লফ্য বাকী থাকিতেই রুকুতে চলিয়া যায় এবং ঐ অবস্থায় সূরা খতম হয় , এইরূপ করা মকরূহ্ । –মুনিয়া 


২৭। মাসআলা : পায়ের জায়গা হইতে সিজদার জায়গা যদি আধ হাত অপেক্ষা উঁচু হয় , তবে নামায দুরুস্ত হইবে না , যদি আধ হাত বা আধ হাতের চেয়ে কম উঁচু হয় , তবে নামায হইয়া যাইবে , কিন্তু বিনা যরূরতে এরূপ করা মকরূহ্ । – মুনিয়া -

Post a Comment

Previous Post Next Post