জেনে নিন কোরবানী করার নিয়ম ও মাসআলা মাসাইল - Islamic Plp File

জেনে নিন কোরবানী করার নিয়ম ও মাসআলা মাসাইল - Islamic Plp File

কোরবানী করিলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় । রাসূলুল্লাহ্ ( সাঃ ) বলিয়াছেনঃ কোরবানীর সময় আল্লাহর নিকট কোরবানীর চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোন জিনিস নাই । কোরবানীর সময় কোরবানীই সবচেয়ে বড় ইবাদত । কোরবানী যবাহ্ করিবার সময় প্রথম যে রক্তের ফোটা পড়ে , তাহা মাটি পর্যন্ত পৌঁছিবার পূর্বেই কোরবানী আল্লাহ্ দরবারে কবূল হইয়া যায় । সুতরাং একান্ত ভক্তি ও আন্তরিক আগ্রহের সহিত খুব ভাল জানওয়ার দেখিয়া কোরবানী করিবে ।

হযরত রাসূলুল্লাহ্ ( সাঃ ) বলিয়াছেনঃ ' কোরবানীর জানওয়ারের যত পশম থাকে প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে এক একটি নেকী লেখা হয় । ' সোবহানাল্লাহ্ !

একটু চিন্তা করিয়া দেখ , ইহা অপেক্ষা বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কি হইতে পারে ? একটি কোরবানী করিয়া কত হাজার নেকী পাওয়া যায় । একটি কোরবানী বকরীর গায়ের পশম সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণিয়াও শেষ করা যায় না একটি কোরবানী করিলে এত নেকী । অতএব , কেহ যদি মালদার এবং ছাহেবে - নেছাব না - ও হয় , তবুও সওয়াবের আশায় তাহার কোরবানী করা উচিত । কেননা , এই সময় চলিয়া গেলে এত অল্প আয়াসে এত অধিক নেকী অর্জনের আর কোন সুযোগ নাই । আর যদি আল্লাহ্ তা'আলা ধনী বানাইয়া থাকেন , তবে নিজের কোরবানীর সঙ্গে সঙ্গে নিজের মৃত মা , বাপ , পীর , ওস্তাদ প্রভৃতির পক্ষ হইতেও কোরবানী করা উচিত যেন তাহাদের রূহে সওয়াব পৌঁছিয়া যায় । হযরত রসূলুল্লাহ্ ( সাঃ ) -এর পক্ষ হইতে তাঁহার বিবি ছাহেবানের ( আমাদের মাতাগণের ) এবং নিজ পীর প্রমুখের পক্ষ হইতেও কোরবানী করিতে পারিলে অতি ভাল । তাঁহাদের রূহ এই সওয়াব পাইয়া অত্যন্ত খুশী হয় । যাহা হউক , অতিরিক্ত করা নফল , কিন্তু নিজ ওয়াজিব রীতিমত আদায় করিতে কিছুতেই ত্রুটি করিবে না । কারণ আল্লাহ্ অগণিত নেয়ামতরাশি অহরহ ভোগ করা সত্ত্বেও তাঁহারই আদেশ , তাঁহারই উদ্দেশ্যে এতটুকু কোরবানী যে না করিতে পারে তাহার চেয়ে হতভাগ্য আর কে আছে ? গোনাহর কথা স্বতন্ত্র ।

কোরবানী করিবার নিয়ম

কোরবানীর জন্তুকে কেব্‌লা রোখ করিয়া শোয়াইয়া প্রথমে এই দো'আটি পড়িবেনঃ اتى وجهت وجهي للذي فطر السموت والأرض حنيفا وما أنا من المشركين إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين الاشريك له وبذلك أمرت وأنا من -المسلمين - اللهم منك ولك

এই দো'আ পড়িয়া যবাহ্ করার পর বলিবেঃ ) بسم الله الله أكبر ' বিছমিল্লাহে আল্লাহু আকবর ' বলিয়া যবাহ্ করিবে ।

(যবাহ্ করার পর বলিবেঃ) اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك محمد وخليلك إبراهيم عليهما الصلوة والسلام

( যদি নিজের কোরবানী হয়, তবে منى বলিবে । আর যদি অন্যের কোরবানী হয় , তবে من এ শব্দের পর যাহার বা যাহাদের কোরবানী তাহার বা তাহাদের নাম উল্লেখ করিবে । আর যদি অন্যের সংগে শরীক হয় , তবে منى ও বলিবে এবং منى এর পর من শব্দ লাগাইয়া তাহার পর অন্যদের নাম উল্লেখ করিবে । )

১। মাসআলা : যাহার উপর ছদকা ফেত্র ওয়াজিব তাহার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব । ( অর্থাৎ , ১০ ই যিল্‌হজ্জের ফজর হইতে ১২ ই যিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোন সময় যদি মালেকে নেছাব হয় , তবে তাহার উপর কোরবানী ওয়াজিব হইবে । ) যে মালদার নহে তাহার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব হইবে না । কিন্তু ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও যদি করিতে পারে , তবে অনেক সওয়াব পাইবে ।

২। মাসআলাঃ মুছাফিরের উপর ( মুছাফিরী হালাতে ) কোরবানী ওয়াজিব নহে ।

৩। মাসআলাঃ ১০ যিল্‌হজ্জ হইতে ১২ ই যিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত এই তিন দিন কোরবানী করার সময় । এই তিন দিনের যে দিন ইচ্ছা সেই দিনই কোরবানী করিতে পারা যায় ; কিন্তু প্রথম দিন সর্বাপেক্ষা উত্তম , তারপর দ্বিতীয় দিন তারপর তৃতীয় দিন ।

৪। মাসআলাঃ বকরা ঈদের নামাযের আগে কোরবানী করা দুরুস্ত নহে । ঈদের নামাযের পর কোরবানী করিবে । অবশ্য যে স্থানে ঈদের নামায বা জুমু'আর নামায দুরুস্ত নহে , সে স্থানে ১০ ই যিল্‌হজ্জ ফজরের পরও কোরবানী করা দুরুস্ত আছে ।

৫। মাসআলা : কোন শহরবাসী যদি নিজের কোরবানীর জীব এমন স্থানে পাঠায় যেখানে জুমু'আ ও ঈদের নামায জায়েয নাই , তবে তথায় ঈদের নামাযের পূর্বে কোরবানী করা দুরুস্ত আছে , যদিও সে নিজের শহরে থাকে । যবাহ্ করার পর তথা হইতে গোশ্ত আনাইয়া খাইতে পারে ।

৬। মাসআলাঃ ১২ ই যিল্‌হজ্জ সূর্য অস্ত যাইবার পূর্ব পর্যন্ত কোরবানী করা দুরুস্ত আছে , সূর্য অস্ত গেলে আর কোরবানী দুরুস্ত নহে ।

৭। মাসআলা : কোরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে দুইটি রাত্র পড়ে সেই দুই রাত্রেও কোরবানী করা জায়েয আছে , কিন্তু রাত্রের বেলায় যবাহ্ করা ভাল নয় । কেননা , হয়ত কোন একটি রগ কাটা না যাইতে পারে ফলে কোরবানী দুরুস্ত হইবে না ।

৮। মাসআলা : কেহ ১০ ই এবং ১১ ই তারিখে ছফরে ছিল বা গরীব ছিল , ১২ ই তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে বাড়ী আসিয়াছে বা মালদার হইয়াছে , বা কোথায়ও ১৫ দিন থাকার নিয়ত করিয়াছে , এরূপ অবস্থায় তাহার উপর কোরবানী ওয়াজিব হইবে ।

৯। মাসআলা : নিজের কোরবানীর জানওয়ার নিজ হাতেই যবাহ্ করা মুস্তাহাব । যদি নিজে যবাহ্ করিতে না পারে , তবে অন্যের দ্বারা যবাহ্ করাইবে , কিন্তু নিজে সামনে দাঁড়াইয়া থাকা ভাল । মেয়েলোক পর্দার ব্যাঘাত হয় বলিয়া যদি সামনে উপস্থিত না থাকিতে পারে , তবে তাহাতে কোন ক্ষতি নাই ।

১০। মাসআলা : কোরবানী করার সময় মুখে নিয়ত করা ও দো'আ উচ্চারণ করা যরূরী নহে । যদি শুধু দেলে চিন্তা করিয়া নিয়ত করিয়া মুখে শুধু ' বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর ' বলিয়া যবাহ্ করে , তবুও কোরবানী দুরুস্ত হইবে । কিন্তু স্মরণ থাকিলেও উক্ত দো'আ দুইটি পড়া অতি উত্তম ।

১১। মাসআলা : কোরবানী শুধু নিজের তরফ হইতে ওয়াজিব হয় । এমন কি না বালেগ সন্তান যদি মালদার হয় , তবুও তাহাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব নহে এবং মা - বাপের উপরও ওয়াজিব নহে । যদি কেহ সন্তানের পক্ষ হইতেও কোরবানী করিতে চাহে , তবে তাহা নফল কোরবানী হইবে । কিন্তু না - বালেগের হইতে কিছুতেই কেরাবানী করিবে না ।

১২। মাসআলা : বকরী , পাঠা , খাসী , ভেড়া , দুম্বা , গাভী , ষাঁড় , বলদ , মহিষ , উট , এই কয় প্রকার গৃহপালিত জন্তুর কোরবানী করা দুরুস্ত আছে । এতদ্ব্যতীত হরিণ ইত্যাদি অন্যান্য হালাল বন্য জন্তুর দ্বারা কোরবানী আদায় হইবে না ।

১৩। মাসআলাঃ গরু , মহিষ এবং উট এই তিন প্রকার জানওয়ারের এক একটি জানওয়ার এক হইতে সাত জন পর্যন্ত শরীক হইয়া কোরবানী করিতে পারে । তবে কোরবানী দুরুস্ত হইবার জন্য শর্ত এই যে , কাহারও অংশ যেন সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম না হয় এবং কাহারও যেন শুধু গোশ্ত খাইবার নিয়ত না হয় , সকলেরই যেন কোরবানীর নিয়ত থাকে ; অবশ্য যদি কাহারও আক্বীকার নিয়ত হয় , তবে তাহাও দুরুস্ত আছে । কিন্তু যদি মাত্র একজনেরও শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত হয় , কোরবানী বা আক্বীক্বার নিয়ত না হয় , তবে কাহারও কোরবানী দুরুস্ত হইবে না । এইরূপ যদি মাত্র একজনের অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হয় , তবে সকলের কোরবানী নষ্ট হইয়া যাইবে ।

১৪। মাসআলাঃ যদি একটি গরুতে সাত জনের কম ৫/৬ জন শরীক হয় এবং কাহারও অংশ সপ্তমাংশ হইতে কম না হয় ; ( যেমন – ৭০ টাকা দিয়া গরু কিনিল কাহারও অংশে যেন দশ টাকার কম না হয় ) তবে সকলের কোরবানী দুরুস্ত হইবে । আর যদি আট জন শরীক হয় , তবে কাহারও কোরবানী ছহীহ্ হইবে না ।

১৫। মাসআলাঃ যদি গরু খরিদ করিবার পূর্বেই সাত জন ভাগী হইয়া সকলে মিলিয়া খরিদ করে , তবে ত তাহা অতি উত্তম , আর যদি কেহ একা একটি গরু কোরবানীর জন্য খরিদ করে এবং মনে মনে এই এরাদা রাখে যে , পরে আরও লোক শরীক করিয়া তাহাদের সঙ্গে মিলিয়া একত্র হইয়া কোরবানী করিব , তবে তাহাও দুরুস্ত আছে । কিন্তু যদি গরু কিনিবার সময় অন্যকে শরীক করিবার এরাদা না থাকে , একা একাই কোরবানী করিবার নিয়ত থাকে , পরে অন্যকে শরীক করিতে চায় , ( কিন্তু ইহা ভাল নহে ) এমতাবস্থায় যদি ঐ ক্রেতা গরীব হয় এবং তাহার উপর কোরবানী ওয়াজিব না হয় , তবে পরে সে অন্য কাহাকেও শরীক করিতে পারিবে না , একা একাই গরুটি কোরবানী করিতে হইবে । আর যদি ঐ ক্রেতা মালদার হয় এবং তাহার উপর কোরবানী ওয়াজিব হয় , তবে ইচ্ছা করিলে পরে অন্য শরীকও মিলাইতে পারে । ( কিন্তু নেক কাজের নিয়ত বদলান ভাল নয় । )

১৬। মাসআলাঃ যদি কোরবানীর জীব হারাইয়া যায় ও তৎপরিবর্তে অন্য একটি খরিদ করে প্রথম জীবটিও পাওয়া যায় , এমতাবস্থায় যদি ক্রেতা মালদার হয় , তবে একটি জীব কোরবানী করা ওয়াজিব হইবে । যদি লোকটি গরীব , হয় , তবে উভয় জীব কোরবানী করা তাহার উপর ওয়াজিব । ( মাসআলা : কোরবানীর জানওয়ার ক্রয় করার পর যদি তাহার বাচ্চা পয়দা হয় , তবে ঐ বাচ্চাও কোরবানী করিয়া গরীব - মিসকীনদিগকে দিয়া দিবে , নিজে খাইবে না । যবাহ্ না করিয়া গরীবকে দান করিয়া দেওয়াও জায়েয । )

১৭। মাসআলাঃ সাতজনে শরীক হইয়া যদি একটি গরু কোরবানী করে , তবে গোশ্ত আন্দাজে ভাগ করিবে না । পাল্লা দ্বারা মাপিয়া সমান সমান ভাগ করিবে ; অন্যথায় যদি ভাগের মধ্যে কিছু বেশকম হইয়া যায় , তবে সুদ হইয়া যাইবে এবং গোনাহ্গার হইতে হইবে । অবশ্য যদি গোশতের সঙ্গে মাথা , পায়া এবং চামড়াও ভাগ করিয়া দেওয়া হয় , তবে যে ভাগে মাথা পায়া বা চামড়া থাকিবে , সে ভাগে গোশ্ত কম হইলে দুরুস্ত হইবে , যত কমই হউক । কিন্তু যে ভাগে গোশ্ত বেশী সে ভাগে মাথা , পায়া বা চামড়া দিলে সুদ হইবে এবং গোনাহ্ হইবে ।

১৮। মাসআলাঃ বকরী পূর্ণ এক বৎসরের কম বয়সের হইলে দুরুস্ত হইবে না । এক বৎসর পুরা হইলে দুরুস্ত হইবে । গরু , মহিষ দুই বৎসরের কম হইলে কোরবানী দুরুস্ত হইবে না । পূর্ণ দুই বৎসরের হইলে দুরুস্ত হইবে । উট পাঁচ বৎসরের কম হইলে দুরুস্ত হইবে না । দুম্বা এবং ভেড়ার হুকুম বকরীর মত ; কিন্তু ছয় মাসের বেশী বয়সের দুম্বার বাচ্চা যদি এরূপ মোটা তাজা হয় যে , এক বৎসরের দুম্বার মধ্যে ছাড়িয়া দিলে চিনা যায় না , তবে সেরূপ দুম্বার বাচ্চার কোরবানী জায়েয আছে , অন্যথায় নহে ! কিন্তু বকরীর বাচ্চা যদি এরূপ মোটা তাজাও হয় , তবুও এক বৎসর পূর্ণ না হইলে কোরবানী দুরুস্ত হইবে না ।

১৯। মাসআলা : যে জন্তুর দুইটি চোখ অন্ধ , অথবা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের তিন ভাগের এক ভাগ বা আরও বেশী দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হইয়া গিয়াছে , সে জন্তুর কোরবানী দুরুস্ত নহেঃ এইরূপ যে জন্তুর একটি কানের বা লেজের এক তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা বেশী কাটিয়া গিয়াছে সে জন্তুরও কোরবানী দুরুস্ত নহে ।
২০। মাসআলা : যে জন্তু এমন খোঁড়া যে , মাত্র তিন পায়ের উপর ভর দিয়া চলে , চতুর্থ পা মাটিতে লাগেই না , অথবা মাটিতে লাগে বটে , কিন্তু তাহার উপর ভর দিতে পারে না , এরূপ জন্তুর কোরবানী দুরুস্ত নহে । আর যদি খোঁড়া পায়ের উপর ভর দিয়া খোঁড়াইয়া চলে , তবে সে জন্তুর কোরবানী জায়েয আছে ।

২১। মাসআলা : জীবটি যদি এমন কৃশ ও শুষ্ক হয় যে , তাহার হাড়ের মধ্যের মগজও শুকাইয়া গিয়া থাকে , তবে সে জন্তুর কোরবানী দুরুস্ত নহে ; হাড়ের ভিতরের মগজ যদি না শুকাইয়া থাকে , তবে কোরবানী জায়েয আছে ।

২২। মাসআলাঃ যে জানওয়ারের একটি দাঁতও নাই , সে জানওয়ারের কোরবানী দুরুস্ত নহে ; আর যতগুলি দাঁত পড়িয়া গিয়াছে তাহা অপেক্ষা যদি অধিকসংখ্যক দাঁত বাকী থাকে , তবে কোরবানী দুরুস্ত আছে ।

২৩। মাসআলাঃ যে জন্তুর কান জন্ম হইতে নাই , তাহার কোরবানী দুরুস্ত নহে । কান হইয়াছে কিন্তু অতি ছোট , তবে তাহার কোরবানী দুরুস্ত আছে ।

২৪। মাসআলা : যে জন্তুর শিংই উঠে নাই বা শিং উঠিয়াছিল , কিন্তু ভাঙ্গিয়া গিয়াছে , তাহার কোরবানী জায়েয আছে । অবশ্য যদি একেবারে মূল হইতে ভাঙ্গিয়া যায় , তবে কোরবানী জায়েয নহে ।

২৫। মাসআলা : যে জন্তুকে খাসী বানাইয়া দেওয়া হইয়াছে তাহার কোরবানী দুরুস্ত আছে । এইরূপে যে জন্তুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হইয়াছে তাহার কোরবানীও জায়েয আছে । অবশ্য খুজলির কারণে যদি জন্তু একেবারে কৃশ হইয়া থাকে , তবে তাহার কোরবানী দুরুস্ত নহে ।

২৬। মাসআলা : ভাল জন্তু ক্রয় করার পর যদি এমন কোন আয়েব হইয়া যায় , যে কারণে কোরবানী দুরুস্ত হয় না , তবে ঐ জন্তুটি রাখিয়া অন্য একটি জন্তু কিনিয়া কোরাবানী করিতে হইবে । অবশ্য যাহার উপর কোরবানী ওয়াজিব নহে , নিজেই আগ্রহ করিয়া কোরবানী করার জন্য কিনিয়াছে , সে ঐটিই কোরবানী করিয়া দিবে , অন্য একটি কেনার দরকার নাই ।

২৭। মাসআলা : কোরবানীর গোশ্ত নিজে খাইবে , নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়াইবে । আত্মীয় - স্বজনকে হাদিয়া তোফা দিবে এবং গরীব মিসকীনদিগকে খয়রাত দিবে । মুস্তাহাব তরীকা এই যে , তিন ভাগ করিয়া এক ভাগ গরীবদিগকে দান করিবে । যদি কেহ সামান্য দান করে , তবে গোনাহ্ হইবে না ।

২৮। মাসআলা : কোরবানীর চামড়া এমনিই খয়রাত করিয়া দিবে । কিন্তু যদি চামড়া বিক্রয় করে , তবে ঠিক ঐ পয়সাই গরীবকে দান করিতে হইবে । ঐ পয়সা নিজে খরচ করিয়া যদি অন্য পয়সা দান করে , তবে আদায় হইয়া যাইবে বটে , কিন্তু অন্যায় হইবে। 

২৯। মাসআলা : কোরবানীর চামড়ার দাম মসজিদ মেরামত বা অন্য কোন নেক কাজে খরচ করা দুরুস্ত নাই , খয়রাত করিতে হইবে ।

৩০। মাসআলা : যদি চামড়া নিজের কাজে ব্যবহার করে যেমন , চালুন , মশক , ডোল বা জায়নামায তৈয়ার করে , তবে ইহাও দুরুস্ত আছে ।

৩১। মাসআলাঃ কোরবানীর জীব যবাহ্কারী ও গোশ্ত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক পৃথকভাবে দিবে , কোরবানীর গোশ্ত চামড়া , কল্লা বা পায়ার দ্বারা দিবে না ।

৩২। মাসআলাঃ কোরবানীর জীবে যদি কোন পোশাক থাকে , তবে উহা এবং দড়ি ইত্যাদি গরীবদিগকে দান করিয়া দিবে , নিজের কাজে লাগাইবে না ।

৩৩। মাসআলাঃ গরীবের কোরবানী ওয়াজিব নহে বটে , কিন্তু যদি কোরবানীর নিয়ত করিয়া জানওয়ার খরিদ করে , তবে তাহার নিয়তের কারণে সেই জানওয়ার কোরবানী করা তাহার উপর ওয়াজিব হইয়া যাইবে ।

৩৪। মাসআলা : কাহারও কোরবানী ওয়াজিব ছিল , কিন্তু কোরবানীর তিনটি দিনই গত হইল অথচ কোরবানী করিল না । এমতাবস্থায় একটি বকরী বা ভেড়ার মূল্য খয়রাত করিয়া দিবে । আর যদি বকরী খরিদ করিয়া থাকে , তবে হুবহু ঐ বকরীটিই খয়রাত করিবে ।

৩৫। মাসআলাঃ যদি কেহ কোরবানীর মান্নত মানে এবং যে মকছুদের জন্য মানিয়াছিল সে মকছুদ পূর্ণ হয় , তবে গরীব হউক বা মালদার হউক , তাহার উপর ঐ কোরবানী করা ওয়াজিব হইবে । কিন্তু মান্নতের কোরবানীর গোশ্ত গরীব মিস্কীনের হক হইবে , নিজে খাইতে পারিবে না । যদি নিজে খায় বা কোন মালদারকে দেয় , তবে যে পরিমাণ খাইয়াছে বা মালদারকে দিয়াছে সেই পরিমাণ পুনরায় গরীবদিগকে দান করিতে হইবে ।

৩৬। মাসআলা : যদি নিজের খুশীতে কোন মৃতকে সওয়াব পৌঁছাইবার উদ্দেশ্যে কোরবানী করে , তবে তাহা দুরুস্ত আছে এবং ঐ গোশ্ত নিজেও খাইতে পারিবে এবং যাহাকে ইচ্ছা দিতেও পারিবে ।

৩৭। মাসআলা : কিন্তু যদি কোন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে কোরবানীর জন্য অছিঅত করিয়া গিয়া থাকে , তবে সেই কোরবানীর গোশ্ত সমস্তই খয়রাত করা ওয়াজিব হইবে ।

৩৮। মাসআলা : কাহারও অনুপস্থিতিতে যদি অন্য কেহ তাহার পক্ষ হইতে তাহার বিনা অনুমতিতে কোরবানী করে , তবে কোরবানী ছহীহ্ হইবে না । আর যদি কোন জীবের মধ্যে অনুপস্থিত ব্যক্তির অংশ তাহার বিনানুমতিতে সাব্যস্ত করে , তবে অন্যান্য অংশীদারের কোরবানীও ছহীহ্ হইবে না ।

৩৯। মাসআলাঃ যদি কোন গরু ছাগল কাহারও নিকট ভাগী বা রাখালী দেওয়া হয় এবং তাহার নিকট হইতে ক্রয় করিয়া কেহ কোরবানী করে , তবে তাহার কোরবানী দুরুস্ত হইবে না ; ভাগীদার জীবের মালিক হয় না । আসল মালিকই প্রকৃত মালিক । আসল মালিকের নিকট হইতে ক্রয় করিলে তবে দুরুস্ত হইবে ।

৪০। মাসআলা : যদি একটি গরু কয়েক জনে মিলিয়া কোরবানী করে এবং প্রত্যেকেরই গরীব - মিসকীনদিগকে বিলাইয়া দেওয়ার বা পাকাইয়া খাওয়াইবার নিয়ত হয় , তবে ইহাও জায়েয আছে । অবশ্য যদি ভাগ করিতে হয় , তবে দাঁড়ি পাল্লা দ্বারা সমান ভাগ করিয়া দিতে হইবে ।

৪১। মাসআলাঃ কোরবানীর চামড়ার পয়সা পারিশ্রমিকস্বরূপ দেওয়া জায়েয নহে । কেননা , উহা খয়রাত করিয়া দেওয়া যরূরী ।

৪২। মাসআলাঃ কোরবানীর গোশ্ত কাফেরদিগকেও দান করা জায়েয আছে । কিন্তু মজুরিস্বরূপ দেওয়া জায়েয নাই । মাসআলাঃ গর্ভবতী জন্তু কোরবানী করা জায়েয আছে । যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় , তবে সে বাচ্চাও যবাহ করিয়া দিবে ।

সূত্র : বেহেস্তী জিওর

Post a Comment

Previous Post Next Post